শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৭ পূর্বাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক: ঢাকার অদূরে সাভারে প্রায় ৭টি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের সাথে পুলিশের দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে সুমন (২২) নামের আন-লিমা গার্মেন্টেসের এক শ্রমিক মারা যায়। এছাড়াও এ ঘটনায় তিন জন গুলিবিদ্ধসহ প্রায় ৩৫ জন আহত হয়েছে।
মঙ্গলবার ৮ জানুয়ারি দুপুরে সাভারের উলাইল ও সকালে হেমায়েতপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আহতদের উদ্ধার করে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, এনাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালসহ আশপাশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গুলিবিদ্ধরা হচ্ছে- আন-লিমা গার্মেন্টেসের শ্রমিক শমেস, স্টান্ডার্ড গ্রুপের যমুনা গার্মেন্টেসের শ্রমিক রুবিয়া বেগম ও বাড়ির গৃহিনী আখি বেগম।
এ দিকে সংঘর্ষের পর শ্রমিকদের বাড়িতে গিয়ে গুলি ছোড়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। গুলিবিদ্ধ স্টান্ডার্ড গ্রুপের শ্রমিক রুবিয়া বেগম বলেন, তারা সকালেই বাড়িতে চলে আসেন। বেলা দশটার পর হঠাৎ পুলিশ তার ভাড়া বাড়িতে গিয়ে জানালা দিয়ে গুলি ছুড়ে। এতে তার ডান পা গুলিবিদ্ধ হয়।
অন্যদিকে গৃহিনী আখি বেগম বলেন, তিনি তার বাড়ির ২য় তলায় ছিলেন। হঠাৎ পুলিশের ছোড়া গুলি তার জানালা দিয়ে কক্ষের ভেতরে প্রবেশ করে। এ সময় তার পেটে গুলিবিদ্ধ হয়।
গুলিবিদ্ধ আন-লিমা গার্মেন্টেসের শ্রমিক শমেস, আহত আইরিন, মনজুরল ও দুলালসহ একাধিক শ্রমিক বলেন, দুপুরের পর থেকে উলাইল এলাকার স্টান্ডার্ড গ্রুপের একটি কারখানার শ্রমিকরা মজুরি বৈষম্যের অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ শুরু করে। এক পর্যায়ে শ্রমিকরা কারখানা থেকে বের হয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক সংলগ্ন উলাইল এলাকার স্থানীয় একটি সড়কে বিক্ষোভ করতে থাকলে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে।
এ সময় শ্রমিকদের লক্ষ্য করে টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ শুরু করে। এ সময় পাশের আন-লিমা গার্মেন্টেসের বেশ কিছু শ্রমিক কারখানার সামনে বের হলে পুলিশের গুলিতে সুমন ও শমেস নামের শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হয়। পরে ওই কারখানার অনান্য শ্রমিকরা তাদের উদ্ধার করে মূল ফটকের ভেতরে নিয়ে গেলে পুলিশ কারখানার ভেতরে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে।
এ সময় পুলিশের ধাওয়ায় আনলিমা ও স্টান্ডার্ড গ্রুপের আরও প্রায় ১০ শ্রমিক আহত হয়। পরে কারখানাটি ছুটি ঘোষণা করলে শ্রমিকরা বাড়ি ফিরে যায়। এ দিকে গুলিবিদ্ধদের মধ্যে একজনকে উদ্ধার করে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এছাড়াও গুলিবিদ্ধ অপর শ্রমিককে এনাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আমজাদুল হক বলেন, তাদের হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় এক শ্রমিককে নিয়ে আসা হয়। তবে ওই শ্রমিক হাসপাতালে আসার আগে পথেই মারা গেছে। এছাড়াও তার লাশটি ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে তিনি জানান।
এ দিকে সকালে সাভারের হেমায়েতপুর এলাকায় স্টান্ডার্ড গ্রুপের সামস, টিসিএল-২ ও দাদ গার্মেন্টেসের শ্রমিকরা কাজে যোগ না দিয়ে হেমায়েতপুর-ট্যানারি সড়কে অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। খবর পেয়ে শিল্প পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সড়িয়ে দিতে ব্যর্থ হলে লাঠিচার্জ শুরু করে।
এ সময় শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করলে শুরু হয়ে যায় উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে পুলিশসহ ২৫ শ্রমিক আহত হয়েছে। এছাড়াও এ ঘটনায় এক গৃহিনীসহ দুই জন গুলিবিদ্ধ হলে তাদের উদ্ধার করে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের অপারেশন ইনচার্জ নাসির উদ্দিন বলেন, তার হাসপাতালে তিনজন গুলিবিদ্ধসহ ১৩ জন ভর্তি রয়েছে।
ঢাকা-১ আশুলিয়া শিল্প পুলিশের পরিচালক সানা সামিনুর রহমান বলেন, গুলিবিদ্ধ হয়ে এক শ্রমিক মারা গেছে। লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে রাখা হয়েছে বলেও তিনি জানান।